সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন | Sexual Reproduction in Flowering Plants | Class 12 Biology Notes in Bengali


📚 সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন 

ভূমিকা

সপুষ্পক উদ্ভিদ বা Angiosperm হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ও বিস্তৃত উদ্ভিদগোষ্ঠী। এরা ফুল নামক বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে যৌন জনন সম্পন্ন করে এবং বীজ ও ফল উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদে জেনেটিক বৈচিত্র্য, নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব এবং প্রজাতির টিকে থাকা নিশ্চিত হয়। তাই সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন শুধু জীববিজ্ঞানের দিক থেকে নয়, মানব সভ্যতার খাদ্য ও অর্থনীতির সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।


আদর্শ ফুলের বিভিন্ন অংশ

একটি পূর্ণাঙ্গ বা আদর্শ ফুলে চারটি প্রধান অংশ থাকে –

  1. বৃত্য (Calyx): সবুজ, কুঁড়িকে সুরক্ষা দেয়।
  2. পাপড়ি (Corolla): রঙিন, পতঙ্গ আকর্ষণ করে।
  3. পুংকেশর (Androecium): পুরুষ প্রজনন অঙ্গ, পরাগ উৎপাদন করে।
  4. স্ত্রীকেশর (Gynoecium): স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ, অণ্ডাশয়ে অণ্ডাণু থাকে।

প্রতিটি অংশ জনন প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।


পরাগরেণু উৎপাদন

  • পুংকেশরের অগ্রকেশর (Anther) এ থাকে চারটি পরাগকোষ
  • প্রতিটি পরাগকোষে পরাগমাতা কোষ (MMC) থাকে।
  • MMC মাইয়োসিসের মাধ্যমে চারটি হ্যাপলয়েড পরাগকণা তৈরি করে।
  • পরাগকণার ভেতরে থাকে –

    • জেনারেটিভ কোষ: দুটি শুক্রাণু উৎপন্ন করে।

    • টিউব কোষ: পরাগনালি তৈরি করে।


স্ত্রীরেণুর উৎপত্তি ও পরিস্ফুটন

  • স্ত্রীরেণু অণ্ডাশয়ের ভেতরে অণ্ডাণুতে তৈরি হয়।
  • একটি অণ্ডাণুতে থাকে নিউসেলাসঅণ্ডকোষ।
  • অণ্ডকোষের ভেতরে একটি মেগাস্পোর মাতা কোষ (MMC) থাকে।
  • মাইয়োসিসের ফলে চারটি মেগাস্পোর তৈরি হয়।
  • একটি কার্যকর থাকে, বাকিগুলি ক্ষয় হয়।
  • কার্যকর মেগাস্পোর বারবার মাইটোসিস বিভাজন করে ভ্রূণথলি (Embryo sac) গঠন করে।
  • ভ্রূণথলিতে থাকে –

    • ১টি ডিম্বকোষ

    • ২টি সহায়ক কোষ (Synergids)

    • ৩টি প্রতিকোষ (Antipodals)

    • ২টি মেরুকেন্দ্রক → মিলে যায় → দ্বিতীয় কেন্দ্রক (Secondary nucleus)


পরাগযোগ (Pollination)

সংজ্ঞা: পরাগরেণুর গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে পরাগযোগ বলে।

প্রকারভেদ

  1. স্বপরাগযোগ (Self-pollination): একই ফুল বা একই উদ্ভিদের ফুলে ঘটে।

  2. ইতর পরাগযোগ (Cross-pollination): এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ঘটে।


স্বপরাগযোগ

  • প্রকারভেদ:

    • অটোগ্যামি (একই ফুলে)

    • গেইটনোগ্যামি (একই গাছে কিন্তু ভিন্ন ফুলে)

  • সুবিধা: সহজ, নির্দিষ্ট।

  • অসুবিধা: জেনেটিক বৈচিত্র্য কম।


ইতর পরাগযোগ

  • ঘটে ভিন্ন গাছের মধ্যে।
  • মাধ্যম – বায়ু (Anemophily), জল (Hydrophily), পতঙ্গ (Entomophily), পাখি (Ornithophily)।
  • এর ফলে বৈচিত্র্য ও অভিযোজন বৃদ্ধি পায়।


ইতর পরাগযোগের অভিযোজন

  1. উজ্জ্বল পাপড়ি ও মধু → পতঙ্গ আকর্ষণ।
  2. হালকা ও অসংখ্য পরাগকণা → বায়ুবাহিত।
  3. পানিতে ভাসমান পরাগকণা → জলীয় উদ্ভিদে।
  4. ফুলের বিশেষ গঠন → স্বপরাগযোগ বাধা দেয়।


পরাগ-গর্ভকেশর প্রতিক্রিয়া

  • পরাগকণা গর্ভমুণ্ডে অঙ্কুরিত হয়।
  • টিউব কোষ → পরাগনালি তৈরি করে।
  • জেনারেটিভ কোষ → দুটি শুক্রাণু দেয়।
  • একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে → জাইগোট গঠন করে।
  • অন্য শুক্রাণু মেরুকেন্দ্রকের সাথে → ত্রিগুণী এন্ডোস্পার্ম তৈরি করে।
  • 👉 একে বলে ডাবল ফার্টিলাইজেশন


যৌন অসাযুজ্যতা (Self-incompatibility)

কিছু ফুলে স্বপরাগযোগ সম্ভব হলেও নিষেক হয় না।
কারণ → গর্ভমুণ্ডে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া পরাগ অঙ্কুরোদগম রোধ করে।


পুংলিলাহর ও স্ত্রীলিলাহরের উৎপত্তি

  • পুংলিলাহর: পরাগকণা অঙ্কুরিত হয়ে পুরুষ গ্যামেটোফাইট তৈরি করে।
  • স্ত্রীলিলাহর: ভ্রূণথলি বা এমব্রিও স্যাক হলো স্ত্রী গ্যামেটোফাইট।


নিষেক (Fertilization)

  1. শুক্রাণু + ডিম্বাণু → জাইগোট (Diploid)

  2. শুক্রাণু + মেরুকেন্দ্রক → এন্ডোস্পার্ম (Triploid)

👉 এটিই Angiosperm-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য।


ভ্রূণের পরিস্ফুটন

  • জাইগোট বিভাজিত হয়ে ভ্রূণ তৈরি করে।

  • ভ্রূণের অংশ –

    • Radicle → মূল

    • Plumule → অঙ্কুর

    • Cotyledon → বীজপত্র


ফল ও বীজ গঠন

  • অণ্ডাশয় → ফল
  • অণ্ডাণু → বীজ
  • ফল ও বীজ বংশবিস্তার নিশ্চিত করে।


উদ্ভিদ জননের কিছু বিশেষ পদ্ধতি

  1. এপোমিক্সিস (Apomixis): নিষেক ছাড়াই বীজ উৎপাদন।
  2. পলিইমব্রিওনি (Polyembryony): এক অণ্ডাণু থেকে একাধিক ভ্রূণ।
  3. ভেজিটেটিভ রিপ্রোডাকশন: কাণ্ড, পাতা বা মূল থেকে নতুন উদ্ভিদ।


ফল ও বীজ গঠনের তাৎপর্য

  • প্রজাতি সংরক্ষণ করে।
  • উদ্ভিদের বিস্তার ঘটায়।
  • জেনেটিক বৈচিত্র্য বজায় রাখে।
  • খাদ্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে।


উপসংহার

সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন একটি জটিল কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। এতে ফুলের বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে পরাগরেণুর উৎপাদন, অণ্ডাণুর গঠন, পরাগযোগ, ডাবল ফার্টিলাইজেশন, ভ্রূণ গঠনফল-বীজের সৃষ্টি ঘটে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পৃথিবীতে সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতির বিস্তার ও বৈচিত্র্য বজায় রয়েছে।




📘 সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন – গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (১ নম্বর)

  1. আদর্শ ফুল বলতে কী বোঝায়?
    👉 যে ফুলে ক্যালিক্স, কোরোলা, অ্যান্ড্রেশিয়াম ও গাইনেশিয়াম সব অংশ থাকে, তাকে আদর্শ ফুল বলে।

  2. পরাগরেণু কোথায় উৎপন্ন হয়?
    👉 অগ্রকেশরের (Anther) পরাগকোষে।

  3. ভ্রূণথলিতে কয়টি নিউক্লিয়াস থাকে?
    👉 ৮টি।

  4. Angiosperm এ কোন ধরনের নিষেক ঘটে?
    👉 ডাবল ফার্টিলাইজেশন।

  5. এন্ডোস্পার্মের প্রকৃতি কী?
    👉 ত্রিগুণী (Triploid)।

  6. অপোমিক্সিস বলতে কী বোঝায়?
    👉 নিষেক ছাড়াই বীজ উৎপাদন।

  7. পরাগযোগের কয়টি প্রকার?
    👉 দুটি – স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগ।


সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২/৩ নম্বর)

  1. স্বপরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধা লিখো।
    👉

  • সুবিধা: সহজ, নির্দিষ্ট বীজ উৎপাদন।
  • অসুবিধা: বৈচিত্র্যের অভাব, দুর্বলতা বৃদ্ধি।

  1. ডাবল ফার্টিলাইজেশন কী?
    👉 একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট তৈরি করে এবং অন্য শুক্রাণু মেরুকেন্দ্রকের সাথে মিলিত হয়ে এন্ডোস্পার্ম তৈরি করে। এ দুই প্রক্রিয়াকে একসাথে ডাবল ফার্টিলাইজেশন বলে।

  2. ইতর পরাগযোগের অভিযোজনের উদাহরণ দাও।
    👉 উজ্জ্বল পাপড়ি, সুগন্ধি ফুল, হালকা পরাগ, মধুক্ষেত্র ইত্যাদি।

  3. এন্ডোস্পার্মের কাজ কী?
    👉 ভ্রূণকে পুষ্টি জোগানো।

  4. মেগাস্পোর মাতা কোষ থেকে কয়টি মেগাস্পোর তৈরি হয়?
    👉 চারটি (এর মধ্যে একটি কার্যকর থাকে)।


সংক্ষিপ্ত রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (৫ নম্বর)

  1. আদর্শ ফুলের গঠন বর্ণনা করো।
    👉 একটি আদর্শ ফুলের চারটি অংশ আছে:

  • ক্যালিক্স → কুঁড়িকে রক্ষা করে।
  • কোরোলা → পতঙ্গ আকর্ষণ করে।
  • অ্যান্ড্রেশিয়াম → পরাগরেণু তৈরি করে।
  • গাইনেশিয়াম → অণ্ডাণু তৈরি করে।

  1. পরাগরেণুর উৎপাদন প্রক্রিয়া আলোচনা করো।
    👉 অগ্রকেশরের পরাগকোষে মাইক্রোস্পোর মাতা কোষ মাইয়োসিসের মাধ্যমে হ্যাপলয়েড পরাগকণা তৈরি করে। প্রতিটি পরাগকণায় টিউব কোষ ও জেনারেটিভ কোষ থাকে।

  2. ভ্রূণথলি গঠনের ধাপগুলি ব্যাখ্যা করো।
    👉

  • মেগাস্পোর মাতা কোষ মাইয়োসিস করে ৪টি মেগাস্পোর তৈরি করে।
  • একটি কার্যকর থেকে ৩ বার মাইটোসিস বিভাজন হয়।
  • এতে ৮টি নিউক্লিয়াস তৈরি হয় → ডিম্বাণু, ২টি সায়নারজিড, ৩টি অ্যান্টিপোডাল, ২টি মেরুকেন্দ্রক।

দীর্ঘ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (৭/৮ নম্বর)

  1. পরাগযোগ কী? এর প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করো।
    👉 পরাগরেণুর গর্ভমুণ্ডে পৌঁছানোকে পরাগযোগ বলে।

  • স্বপরাগযোগ: একই ফুল বা একই উদ্ভিদের ফুলে ঘটে।

  • ইতর পরাগযোগ: এক উদ্ভিদ থেকে অন্য উদ্ভিদের ফুলে ঘটে (বায়ু, জল, পতঙ্গ ইত্যাদির সাহায্যে)।

  1. ডাবল ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।
    👉 পরাগনালি গর্ভমুণ্ডে প্রবেশ করে। দুটি শুক্রাণুর মধ্যে—

  • একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট তৈরি করে।

  • অন্যটি মেরুকেন্দ্রকের সাথে মিলিত হয়ে এন্ডোস্পার্ম তৈরি করে।
    👉 এটি কেবল Angiosperm-এ ঘটে।

  1. ফল ও বীজ গঠনের প্রক্রিয়া বর্ণনা করো।
    👉

  • অণ্ডাণু নিষিক্ত হয়ে জাইগোট → ভ্রূণ তৈরি করে।
  • মেরুকেন্দ্রকের সাথে শুক্রাণুর মিলন → এন্ডোস্পার্ম তৈরি হয়।
  • অণ্ডাণু → বীজে রূপান্তরিত হয়।
  • অণ্ডাশয় → ফলে রূপান্তরিত হয়।


👉 এগুলো WBCHSE, CBSE এবং NEET – তিন ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর।

Post a Comment

We’d love to hear your thoughts! Share your comment below.

Previous Post Next Post