Welcome to DailyUpdate
📰 সুপ্রিম কোর্টের কড়া বার্তা: বেআইনি প্রক্রিয়া ধরা পড়লেই বাতিল হবে এসআইআর, রায় কার্যকর হবে সারা দেশে
ভারতের ভোটার তালিকা সবসময়ই দেশের গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভোটার তালিকা সঠিকভাবে তৈরি না হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা নষ্ট হয়। তাই নির্বাচন কমিশন নিয়মিতভাবে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) চালায়। এর মাধ্যমে নতুন ভোটারদের নাম তোলা হয়, মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হয় এবং পুরনো ভুলভ্রান্তি সংশোধন করা হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিহারে চলা এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একাধিক মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে যে, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বেআইনি ও অসংগতি রয়েছে। এই বিষয়েই সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলে আসছে। আর সেই মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) অত্যন্ত কড়া অবস্থান নিল।
আদালতের স্পষ্ট বার্তা: বেআইনি কাজ হলে বাতিল পুরো প্রক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে—
- যদি বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় (SIR) কোনও বেআইনি বা অনিয়ম ধরা পড়ে, তবে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হবে।
- কেবলমাত্র বিহার নয়, গোটা দেশেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে।
- চূড়ান্ত রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত হয়েছে ৭ অক্টোবর ২০২৫।
আদালতের এই মন্তব্যের পর এখন শুধু বিহার নয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যেও এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে চাপা টানাপড়েন শুরু হয়েছে। কারণ যদি আদালত বেআইনি কিছু খুঁজে পায়, তবে শুধু একটি রাজ্য নয়, গোটা দেশেই ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে।
আধার কার্ড: পরিচয় প্রমাণ, কিন্তু নাগরিকত্ব নয়
এর আগে, বিহারের মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, আধার কার্ডকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে পরিচয় প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে আদালত আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে—
- আধার কার্ড কখনওই নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
- শুধুমাত্র ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্যই আধার ব্যবহার করা যাবে।
- নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য আধারকে কোনওভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।
এই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, এটি সম্পূর্ণ ভুল।
মামলাকারীদের দাবি ও আদালতের অবস্থান
মামলাকারীদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানো হয়েছিল যে, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের (১ অক্টোবর) আগে যেন শুনানি হয়। কিন্তু আদালত জানিয়েছে, দশেরার ছুটির কারণে ১ অক্টোবরের আগে শুনানি সম্ভব নয়। তবে আদালত এটাও পরিষ্কার করেছে—
- ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গেলেও কোনও সমস্যা নেই।
- বেআইনি কিছু প্রমাণিত হলে, প্রকাশিত ভোটার তালিকাও বাতিল করে দেওয়া হবে।
অর্থাৎ, আদালত নিশ্চিত করেছে যে, স্বচ্ছতা বজায় রাখাই সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। প্রকাশিত তালিকা চূড়ান্ত নয়, যদি তা ভুল বা বেআইনি উপায়ে তৈরি হয়ে থাকে।
কেন এত বিতর্ক?
ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া সাধারণত শান্তিপূর্ণভাবে হয়। কিন্তু বিহারে এই কাজ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে—
- আধার বাধ্যতামূলক করা নিয়ে আপত্তি উঠেছে।
- অনেক মানুষ অভিযোগ করেছেন যে তাঁদের নাম হঠাৎ বাদ দেওয়া হয়েছে।
- কিছু জায়গায় অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক স্বার্থে নাম বাদ বা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
- এনজিও এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়া যদি বেআইনি হয় তবে মানুষের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।
এই কারণেই মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আদালতের মন্তব্যের তাৎপর্য
সুপ্রিম কোর্টের এই বক্তব্যের কয়েকটি বড় দিক আছে—
- গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকার: ভোটার তালিকা সঠিক না হলে ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। আদালত তা হতে দেবে না।
- দেশব্যাপী প্রভাব: আগে ধারণা ছিল রায় শুধু বিহারের জন্য হবে। কিন্তু এখন নিশ্চিত যে, দেশের সব রাজ্যে এই রায় কার্যকর হবে।
- নাগরিকত্ব প্রসঙ্গ: আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ না মানায় ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব সম্পর্কিত বিতর্কে বড় ভূমিকা রাখবে এই রায়।
আগামী ৭ অক্টোবর: সবার নজর
সবাই এখন অপেক্ষা করছে ৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের দিকে। সেদিন এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি হবে। আদালতের রায় অনুযায়ী, যদি কোনও বেআইনি দিক পাওয়া যায় তবে গোটা দেশেই ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া বাতিল হতে পারে।
এর ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর বিরাট প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ভোটার তালিকাই নির্বাচনের মূল ভিত্তি।
উপসংহার
সুপ্রিম কোর্টের বার্তা স্পষ্ট—
- গণতন্ত্রে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে কোনও আপস করা যাবে না।
- আধার শুধুমাত্র পরিচয়ের প্রমাণ, নাগরিকত্ব নয়।
- বেআইনি কাজ হলে প্রক্রিয়া প্রকাশিত হলেও বাতিল হবে।
- এই রায় গোটা দেশেই কার্যকর হবে।
এখন দেখার বিষয়, আগামী ৭ অক্টোবরের চূড়ান্ত রায় কী হয়। সেই রায়ের উপর নির্ভর করছে দেশের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ এবং কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকার।