Welcome to DailyUpdate
হাসিনার স্টাইল অনুসরণ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করলেন: রাজনৈতিক অস্থিরতার পর্যালোচনা
ভূমিকা
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে নেপাল— প্রায় প্রতিটি দেশই রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কখনো না কখনো অস্থিরতা মোকাবিলা করেছে। সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে এই পদত্যাগের ধরন। অনেকে বলছেন, “হাসিনার স্টাইলে পালালেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী”।
প্রশ্ন হচ্ছে— “হাসিনার স্টাইল” বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? কেন এই তুলনা টানা হচ্ছে? এবং নেপালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য কী? চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
নেপালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
নেপাল একটি পার্বত্যভূমি অধ্যুষিত দেশ, যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবসময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তরের পর দেশটিতে একাধিকবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠতে থাকে—
- দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা
- সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা
এমন প্রেক্ষাপটে জনগণ ধীরে ধীরে অসন্তুষ্ট হতে থাকে।
আন্দোলনের সূত্রপাত
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালের সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করে।
এরপরই আন্দোলনের সূচনা হয়—
- রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়।
- ধীরে ধীরে পোখারা, বুতোয়াল, ভারতপুর ও ইতাহারিসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং বেকার তরুণদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন দ্রুত আকার ধারণ করে।
আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ
সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা রাস্তায় লাঠি, গাছের ডাল, জলের বোতল নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হয়।
- ৪০০’র বেশি মানুষ আহত হয়।
- নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকারবিরোধী স্লোগানে কেঁপে ওঠে রাজধানী কাঠমান্ডু।
পদত্যাগের পটভূমি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আন্দোলনকারীরা ওলির পদত্যাগের দাবি তীব্রভাবে জানান।
অবশেষে সেনাপ্রধানের চাপ ও রাজনৈতিক মহলের চাপে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হন ওলি।
“হাসিনার স্টাইলে পালানো” কথাটির উৎস
বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম নিয়ে যে তুলনা টানা হচ্ছে, তার মূল কারণ হলো—
“বিরোধীরা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের চাপের বদলে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেন।”
- অনেক সময় তাঁকে ঘিরে গুজব বা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা প্রচলিত থাকে যে তিনি চাপের মুখে দেশ ছাড়তে পারেন বা পালাতে পারেন।
- যদিও শেখ হাসিনা বাস্তবে দেশ ছাড়েননি, তবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক কথোপকথনে “হাসিনার স্টাইল” বলতে বোঝানো হয় চাপে পড়ে পদত্যাগ বা সরে দাঁড়ানো।
নেপালের কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগকে তাই অনেকেই এভাবে তুলনা করছেন।
নেপালের জনগণের ক্ষোভ কেন বাড়ল?
১. অযৌক্তিক সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা:
তরুণ প্রজন্মের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া শুধু বিনোদন নয়, আয়ের একটি বড় উৎস। সেই সুযোগ বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে।
২. দুর্নীতির অভিযোগ:
ওলির সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
৩. দমননীতি:সেনা ও পুলিশ দ্বারা বিক্ষোভ দমন জনগণের ক্ষোভকে তীব্রতর করে তোলে।”
- ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না আসলেও দক্ষিণ ব্লক ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
- চীন নেপালের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
- জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনীতি
ওলির পদত্যাগের পর নেপালের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—
- কে হবেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী?
- সেনাবাহিনী কি পর্দার আড়াল থেকে সিদ্ধান্ত নেবে?
- তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন কি নতুন রাজনৈতিক শক্তির জন্ম দেবে?
বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা
নেপালের এই রাজনৈতিক ঘটনা থেকে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশরা শিখতে পারে যে, জনগণের স্বাভাবিক মতপ্রকাশ এবং বিক্ষোভের প্রতি অবহেলা রাজনীতিতে বড় অস্থিরতার কারণ হতে পারে।
“মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধের ফলাফল প্রায়শই মারাত্মক হয়।”
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন শুধু বিনোদন নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- তরুণ প্রজন্মকে উপেক্ষা করে কোনো সরকার স্থিতিশীল থাকতে পারে না।
উপসংহার
“হাসিনার স্টাইলে পালালেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী” — এই মন্তব্য আসলে রাজনৈতিক চাপ ও আন্দোলনের মুখে কেপি শর্মা ওলির আকস্মিক পদত্যাগকে বোঝাচ্ছে। নেপালের এই ঘটনা প্রমাণ করে, গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি।
যে কোনো সরকার যদি জনগণের মৌলিক অধিকার সীমিত করে, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, তবে সেই সরকার টিকে থাকতে পারে না। নেপালের ঘটনায় শেখার বিষয় হলো— দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে জনগণের রায়ই শেষ কথা।