দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশ্নোত্তর | নবম শ্রেণীর ভূগোল ষষ্ঠ অধ্যায় | WB Class 9 Geography Durjog O Biporjoy All Questions & Answers


দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশ্নোত্তর | নবম শ্রেণীর ভূগোল ষষ্ঠ অধ্যায় | WB Class 9 Geography Durjog O Biporjoy All Questions & Answers


MCQ | দুর্যোগ ও বিপর্যয় (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্নোত্তর

WB Class 9 Geography | Disaster & Hazards (Chapter 6) MCQ

(প্রতিটি প্রশ্নের মান – ১)


১. সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে যে ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায় তা হলো—
(A) খরা
(B) দাবানল
(C) ধস
(D) সুনামি
👉 উত্তর: (D) সুনামি


২. ধস সাধারণত কোন অঞ্চলে বেশি ঘটে?
(A) পার্বত্য অঞ্চল
(B) মরুভূমি অঞ্চল
(C) অরণ্য অঞ্চল
(D) সমভূমি অঞ্চল
👉 উত্তর: (A) পার্বত্য অঞ্চল


৩. ভূমিধসের জন্য দায়ী নয়—
(A) বৃক্ষচ্ছেদন
(B) বহুমুখী নদী পরিকল্পনা
(C) নগরায়ণ
(D) সুনামি
👉 উত্তর: (D) সুনামি


৪. একটি জলবায়ুগত দুর্যোগের উদাহরণ কোনটি?
(A) অগ্ন্যুৎপাত
(B) বন্যা
(C) দাবানল
(D) সুনামি
👉 উত্তর: (B) বন্যা


৫. আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগের উদাহরণ হলো—
(A) অগ্ন্যুৎপাত
(B) সুনামি
(C) তুষারঝড়
(D) ধস
👉 উত্তর: (D) ধস


৬. তুষারঝড় বেশি ঘটে—
(A) নিরক্ষীয় অঞ্চল
(B) মরু অঞ্চল
(C) মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চল
(D) মেরু অঞ্চল
👉 উত্তর: (D) মেরু অঞ্চল


৭. খরা, বন্যা, তুষারঝড় প্রভৃতি কোন শ্রেণির দুর্যোগের অন্তর্গত?
(A) ভূতাত্ত্বিক দুর্যোগ
(B) ভূমিরূপগত দুর্যোগ
(C) মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ
(D) বায়ুমণ্ডলীয় দুর্যোগ
👉 উত্তর: (D) বায়ুমণ্ডলীয় দুর্যোগ


৮. পাহাড়ি এলাকায় কয়েকদিন ধরে প্রবল বর্ষণের ফলে ঢিলা পাথর নেমে আসাকে কী বলে?
(A) ভূমিকম্প
(B) ভূমিধস
(C) সুনামি
(D) হড়পা বান
👉 উত্তর: (B) ভূমিধস


৯. বনের মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানি কিংবা দীর্ঘ খরার ফলে শুকনো গাছপালা থেকে কী সৃষ্টি হয়?
(A) দাবানল
(B) ভূমিধস
(C) ভূমিকম্প
(D) এর কোনোটিই নয়
👉 উত্তর: (A) দাবানল


১০. রাষ্ট্রসংঘের মতে বিপর্যয় বলতে বোঝায়—
(A) 100 জন আহত
(B) 200 জন নিহত
(C) প্রচুর ঘরবাড়ি ও জমিজমা ধ্বংস
(D) 100 জন নিহত ও 100 জন আহত
👉 উত্তর: (D) 100 জন নিহত ও 100 জন আহত


১১. ভূত্বকের আকস্মিক কম্পনকে কী বলা হয়?
(A) অগ্ন্যুৎপাত
(B) ধস
(C) ভূমিকম্প
(D) পীড়ন
👉 উত্তর: (C) ভূমিকম্প


১২. “Tsunami” শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
(A) জাপানি
(B) ফরাসি
(C) আরবি
(D) নেপালি
👉 উত্তর: (A) জাপানি


১৩. দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে Mock Camp আয়োজনের উদ্দেশ্য কী?
(A) ভোটদান শেখানো
(B) সাধারণ শিক্ষা প্রদান
(C) দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
(D) এর কোনোটিই নয়
👉 উত্তর: (C) দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি


১৪. ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনা কোন ধরনের দুর্যোগের অন্তর্গত?
(A) প্রাকৃতিক দুর্যোগ
(B) মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ
(C) আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ
(D) ধসজনিত দুর্যোগ
👉 উত্তর: (B) মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ


১৫. মনুষ্যসৃষ্ট চরম বিপর্যয়ের একটি উদাহরণ হলো—
(A) ভূমিকম্প
(B) অগ্ন্যুৎপাত
(C) পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ
(D) খরা
👉 উত্তর: (C) পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ


১৬. বিপর্যয় লঘুকরণ দিবস পালিত হয়—
(A) 10 অক্টোবর
(B) 10 নভেম্বর
(C) 5 সেপ্টেম্বর
(D) 5 জানুয়ারি
👉 উত্তর: (A) 10 অক্টোবর


১৭. কোন দেশকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়?
(A) জাপান
(B) ইরাক
(C) মায়ানমার
(D) ভারত
👉 উত্তর: (A) জাপান


১৮. মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতবর্ষ ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলিকে কী ধরনের দুর্যোগে ফেলতে পারে?
(A) সুনামিজনিত ক্ষতি
(B) বন্যা ও খরার দুর্যোগ
(C) কৃষিকাজের সুবিধা
(D) নদীতে পানির ঘাটতি
👉 উত্তর: (B) বন্যা ও খরার দুর্যোগ


১৯. Civil Defence Rescue Vehicle চালু করা হয়েছে—
(A) হাসপাতাল সেবা দেওয়ার জন্য
(B) দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য
(C) সেবাকর্মীদের সাহায্যের জন্য
(D) এর কোনোটিই নয়
👉 উত্তর: (B) দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য


অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | দুর্যোগ ও বিপর্যয় (ষষ্ঠ অধ্যায়) | নবম শ্রেণীর ভূগোল

WB Class 9 Geography | Durjog o Biporjoy VSAQ Question Answer
(প্রতিটি প্রশ্নের মান – ১)


১. অধিক গভীরতায় সংঘটিত ভূমিকম্পকে কী বলে?
👉 যেসব ভূমিকম্প পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক গভীরে ঘটে, তাদের বলা হয় পাতালিক ভূমিকম্প


২. পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় কোন ধরনের বিপর্যয় বেশি ঘটে?
👉 পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে খরা দুর্যোগ বারবার দেখা যায়।


৩. ভারতে খরা নিয়ন্ত্রণে কোন মন্ত্রক প্রধানত কাজ করে?
👉 ভারতের কৃষি মন্ত্রক খরা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।


৪. দুর্যোগের ক্ষতি কমানোর প্রক্রিয়াকে কী বলা হয়?
👉 প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি লাঘব করার পরিকল্পনাকে বলা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা


৫. জাতীয় জলসম্পদ মন্ত্রক কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় ভূমিকা পালন করে?
👉 জাতীয় জলসম্পদ মন্ত্রক মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।


৬. রিখটার স্কেল কী?
👉 ভূমিকম্পের কম্পনের মাত্রা ও তীব্রতা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রকে বলা হয় রিখটার স্কেল


৭. হড়পা বান বলতে কী বোঝায়?
👉 পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাত (মেঘভাঙা বৃষ্টি) হলে দ্রুত জলপ্রবাহ নেমে আসাকে বলা হয় হড়পা বান


৮. ধস কোন ধরনের দুর্যোগ?
👉 ধস প্রাকৃতিক কারণে ঘটলেও অনেক সময় মানুষের কাজেও তা ত্বরান্বিত হয়, তাই একে আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়।


৯. কীরকম জলবায়ুতে তুষারঝড় হয়?
👉 চরম শীতপ্রধান ও অতিশীতল জলবায়ুতে প্রবল বরফঝড় বা তুষারঝড় দেখা যায়।


১০. পিলিন কী ধরনের বিপর্যয়?
👉 পিলিন মূলত একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়, যা প্রচণ্ড বেগে বায়ুপ্রবাহ ও ধ্বংস ডেকে আনে।


১১. ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে কীরকম চাপ থাকে?
👉 ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে সর্বদা নিম্নচাপ বিরাজ করে।


১২. দক্ষিণবঙ্গের কোন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বেশি পড়ে?
👉 দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।


১৩. ভারতের দুটি রাজ্যে মৌসুমি ঝড়ের প্রভাব কোথায় দেখা যায়?
👉 ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মৌসুমি ঝড়ের ভয়াবহ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।


১৪. ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতিবিধি কোন যন্ত্রে রেকর্ড হয়?
👉 ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতিবিধি নিরীক্ষণের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র হলো সিসমোগ্রাফ



সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | দুর্যোগ ও বিপর্যয় (ষষ্ঠ অধ্যায়)

নবম শ্রেণীর ভূগোল | WB Class 9 Geography | SAQ (২ নম্বরের প্রশ্নোত্তর)


১. সুনামি কী?
👉 ‘সুনামি’ শব্দটি জাপানি ভাষা থেকে এসেছে। এখানে “সু” মানে বন্দর এবং “নামি” মানে তরঙ্গ বা ঢেউ। অর্থাৎ সুনামি শব্দের অর্থ হলো ‘বন্দরের তরঙ্গ’। সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বা সমুদ্রতলের ভূমিধসের কারণে এক বিশাল জলরাশি প্রচণ্ড বেগে উপকূলের দিকে ধেয়ে এলে তাকে সুনামি বলা হয়।


২. অগ্ন্যুৎপাত বলতে কী বোঝো?
👉 পৃথিবীর ভেতরে গলিত পদার্থকে বলা হয় ম্যাগমা। এই ম্যাগমা, ভূগর্ভস্থ গ্যাস, ধোঁয়া, বাষ্প, ছাই ইত্যাদি যদি ভূত্বকের দুর্বল স্থান বা ফাটলের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে অগ্ন্যুৎপাত বলা হয়। এতে আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে লাভা ও ছাই নির্গত হয় এবং আশপাশের অঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


৩. হিমানী সম্প্রপাত কী?
👉 পার্বত্য অঞ্চলে হিমরেখার উপরের এলাকায় জমে থাকা তুষার ও বরফ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ধীরে ধীরে ঢাল বেয়ে নেমে আসে, একে হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার বলে। এই গ্লেসিয়ারের কোনো অংশ ভেঙে যদি একসাথে বিশাল বরফের স্তূপ দ্রুত নিচে নেমে আসে, তখন সেটাকে বলা হয় হিমানী সম্প্রপাত। এটি একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।


৪. তুষারঝড় কোথায় দেখা যায়?
👉 তুষারঝড় সাধারণত মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে বেশি হয়, অর্থাৎ ৬০° থেকে ৯০° অক্ষাংশের মধ্যে। শীতকালে কানাডা, উত্তর আমেরিকা, সাইবেরিয়া, উত্তর ইউরোপ এবং অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে এই ঝড় বেশি দেখা যায়। এখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে তুষারের সাথে ঝোড়ো বাতাস মিলিত হয়ে মারাত্মক তুষারঝড় সৃষ্টি করে।


৫. আধা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে কী বোঝো?
👉 যে সব দুর্যোগের পেছনে প্রকৃতি ও মানুষের কার্যকলাপ উভয়ই দায়ী, সেগুলিকে আধা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়। যেমন— মানুষের কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হলে বা জলাধার নষ্ট হলে বন্যা অনেক বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আবার অযথা বৃক্ষচ্ছেদন ও পাহাড় কেটে বসতি গড়লে ভূমিধস তীব্র আকার ধারণ করে। তাই এসব দুর্যোগকে বলা হয় আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ


৬. WHO এর মতে বিপর্যয় কী?
👉 WHO (World Health Organization) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিপর্যয় হলো এমন একটি ঘটনা যার ফলে ব্যাপকভাবে মানব মৃত্যুহানি, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটে। অর্থাৎ এটি এমন এক পরিস্থিতি যা মানুষের জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্য উভয়কেই বিপন্ন করে তোলে।


৭. IMD সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
👉 IMD (Indian Meteorological Department) হলো ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা যা ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মূলত আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূমিকম্প সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। বর্তমানে এটি পৃথিবী বিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে এবং এর প্রধান কার্যালয় দিল্লিতে অবস্থিত। ঝড়, বন্যা, তাপপ্রবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সতর্কবার্তা দেওয়াও এর অন্যতম প্রধান কাজ।


৮. বিপর্যয় মোকাবিলায় ঝুঁকি বলতে কী বোঝায়?
👉 কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় দুর্যোগ সংঘটিত হলে সেই অঞ্চলের মানুষের জীবনহানি, সম্পদের ক্ষতি এবং আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা যতটা বেশি থাকে, তাকেই বলা হয় ঝুঁকি। অর্থাৎ, বিপর্যয় ঘটলে কোন অঞ্চল কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার হিসেবকেই ঝুঁকি বলা হয়।


৯. ঘূর্ণিঝড় বলতে কী বোঝো?
👉 ঘূর্ণিঝড় হলো এক ধরনের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেখানে বায়ুমণ্ডলের প্রবল নিম্নচাপের কারণে বাতাস চক্রাকারভাবে ঘূর্ণায়মান গতিতে প্রবাহিত হয়। এই ঝড় সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানলে প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাস, বৃষ্টিপাত ও ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আসে। এটি সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।


১. ধসের একটি প্রাকৃতিক ও একটি মানুষ্যসৃষ্ট কারণ লেখ।

উত্তর:
ধস বা Landslide সাধারণত ভূমির হঠাৎ ভেঙে পড়া বা সরে যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এর পেছনে প্রাকৃতিক কারণ যেমন থাকে, তেমনি মানুষের কর্মকাণ্ডও ভূমিকা রাখে।

  • প্রাকৃতিক কারণ: পাহাড়ি অঞ্চলে ঢাল বেশি থাকলে এবং টানা প্রবল বৃষ্টিপাত হলে শিলাস্তরে অতিরিক্ত জল প্রবেশ করে। এর ফলে মাটি ও পাথরের সংযোগ শিথিল হয়ে যায়, ভূমি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে হঠাৎই পাহাড়ি অংশ বা ঢালযুক্ত ভূমি নীচের দিকে ধসে পড়ে।

  • মানুষ্যসৃষ্ট কারণ: পাহাড় বা ঢালু অঞ্চলের মাটি ও শিলাকে গাছের শিকড় শক্ত করে বেঁধে রাখে। কিন্তু নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, রাস্তা নির্মাণ, খনন কাজ ইত্যাদির ফলে মাটি আলগা হয়ে পড়ে এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। এর ফলে ধসের প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।

👉 তাই বলা যায়, প্রাকৃতিক কারণ যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সঙ্গে যুক্ত, তেমনি মানুষের অসচেতন কর্মকাণ্ডও ধস বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে।


২. ভূমিকম্প কাকে বলে?

উত্তর:
ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত শক্তির আকস্মিক মুক্তির ফল।

ভূ-অভ্যন্তরে শিলা স্তর দীর্ঘকাল ধরে চাপ বা পীড়নের শিকার হয়। কোনো একটি পর্যায়ে শিলা ভেঙে গেলে বা সরে গেলে সেই সঞ্চিত শক্তি হঠাৎই তরঙ্গের আকারে বাইরে বেরিয়ে আসে। এই তরঙ্গ ভূত্বকের উপরিভাগে পৌঁছে মুহূর্তের জন্য ভূ-পৃষ্ঠ কাঁপিয়ে তোলে।

  • ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ এক-দুই মিনিট স্থায়ী হয়।

  • অনেক সময় কম্পন এত দুর্বল হয় যে তা টের পাওয়া যায় না, আবার প্রবল ভূমিকম্প ঘরবাড়ি, সেতু, রেলপথ ধ্বংস করে বিপুল প্রাণহানি ঘটায়।

  • ভূমিকম্পের কেন্দ্রকে বলা হয় উৎসকেন্দ্র (Focus) এবং ভূ-পৃষ্ঠের উপর যেখানে কম্পনের প্রভাব সর্বাধিক সেখানে বলা হয় উপকেন্দ্র (Epicenter)

👉 সংক্ষেপে, ভূ-অভ্যন্তরে শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে যে কম্পন পৃথিবীর পৃষ্ঠে অনুভূত হয় তাকেই ভূমিকম্প বলে।


৩. বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি কি কি?

উত্তর:
বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হলো প্রাকৃতিক বা মানুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। এর মধ্যে রয়েছে –

  1. মানব জীবন রক্ষা: বিপর্যয়ের সময় দ্রুত মানুষের জীবন ও প্রাণীজীবনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া।

  2. পূর্বাভাস ব্যবস্থা: যথাসম্ভব আগে সতর্কবার্তা প্রদান, যেমন – ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা থাকলে খবর পৌঁছে দেওয়া।

  3. ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ: দুর্গতদের কাছে দ্রুত খাদ্য, বিশুদ্ধ জল, ওষুধ, আশ্রয় এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া।

  4. উদ্ধার কাজ: বিপর্যয় চলাকালীন আহত ও আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

  5. পুনর্বাসন: ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে পুনর্বাসিত করা এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা।

  6. ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি: ভবিষ্যতে একই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, পরিকাঠামো, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়ানো।

👉 অর্থাৎ, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা শুধু দুর্যোগের সময় সাহায্য নয়, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতিও তৈরি করে।


৪. দুর্যোগ ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তর:
শিক্ষার্থীরা দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ তারা সমাজের সক্রিয় অংশ এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার শক্তি রাখে।

  • দুর্যোগের আগে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় দমকল, হাসপাতাল, পুলিশ, ত্রাণ দপ্তর ইত্যাদি সংস্থার ফোন নম্বর ও ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখতে পারে।

  • বিপর্যয়ের সময় আহতদের উদ্ধার করা, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা এবং বয়স্ক ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে সাহায্য করতে পারে।

  • ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, তথ্য বিনিময় এবং দুর্গতদের কাছে প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।

  • পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে ভবিষ্যৎ দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

  • বন্যা হলে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।

  • দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, পুনর্বাসনে সহযোগিতা এবং মানুষকে মানসিকভাবে সাহস জোগাতে পারে।

👉 তাই শিক্ষার্থীরা কেবল পাঠ্যবই নয়, বাস্তব জীবনের "সচেতন নাগরিক" হিসেবেও দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।


৫. বিপর্যয় নির্ধারণের মানদণ্ডগুলি কি কি?

উত্তর:
সাধারণ দুর্ঘটনা আর বিপর্যয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে।

  1. দীর্ঘস্থায়িত্ব: দুর্ঘটনা কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা স্থায়ী হলেও, বিপর্যয়ের প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়।

  2. ক্ষতির ব্যাপকতা: বিপর্যয়ের ফলে মানুষের জীবন, প্রাণীজীবন ও সম্পত্তির চরম ক্ষতি ঘটে। ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি হয় যে তা সহজে পূরণ করা যায় না।

  3. ভূগোলভিত্তিক প্রভাব: বিপর্যয় সাধারণত বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চলজুড়ে প্রভাব ফেলে।

  4. সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি: বিপর্যয়ের কারণে মানুষ গৃহহীন, কর্মহীন হয়ে পড়ে এবং সমাজের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

  5. বিপর্যয় প্রবণ অঞ্চল: যেসব অঞ্চল বারবার এমন ক্ষতিকর দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়, তাদের বিশেষভাবে বিপর্যয় প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

👉 অর্থাৎ, যখন কোনো দুর্ঘটনা শুধু ক্ষণস্থায়ী না হয়ে ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, তখনই সেটিকে বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়।


১. জৈব আবহবিকার কাকে বলে? জৈব আবহবিকার কী কী পদ্ধতিতে সংঘটিত হয়?

অথবা, “জৈব আবহবিকার একই সঙ্গে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক” – প্রমাণ করো।

উত্তর:

জৈব আবহবিকার কী?
প্রকৃতিতে বিদ্যমান জীবজগৎ (উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ) শিলার উপর যান্ত্রিক (চূর্ণ-বিচূর্ণ) ও রাসায়নিক (গঠন পরিবর্তন) উভয় প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। জীবজগতের দ্বারা সংঘটিত এই প্রকার আবহবিকারকে বলা হয় জৈব আবহবিকার

অর্থাৎ, জীবজগত কখনও শক্তি প্রয়োগ করে শিলাকে ভেঙে দেয়, আবার কখনও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার গঠন পরিবর্তন করে। তাই জৈব আবহবিকারকে বলা হয় একই সঙ্গে যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক আবহবিকার।


জৈব আবহবিকারের প্রধান পদ্ধতি

জৈব আবহবিকার মূলত দুটি পদ্ধতিতে ঘটে –

  1. জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার

  2. জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার


১. জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার

জীবজগতের প্রভাবে শিলা কেবল ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায়, কিন্তু রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন আসে না। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার

এটি তিনভাবে ঘটে –

(ক) উদ্ভিদ দ্বারা সৃষ্ট যান্ত্রিক আবহবিকার

  • গাছপালার শিকড় শিলার ফাটলে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে শক্ত শিলাকে ফাটিয়ে দেয়।

  • শিলার ক্ষুদ্র অংশ আলগা হয়ে পড়ে এবং মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
    👉 যেমন – পাথরের ফাঁকে জন্মানো বটগাছ বা অশ্বত্থ গাছের শিকড় পাথরকে ভেঙে ফেলে।

(খ) প্রাণীর দ্বারা সৃষ্ট যান্ত্রিক আবহবিকার

  • কেঁচো, ইদুর, খরগোশ, ছুঁচো, প্রেইরী কুকুর ইত্যাদি প্রাণী মাটির নিচে গর্ত খুঁড়ে শিলার স্তরকে দুর্বল করে।

  • কীটপতঙ্গও এভাবে শিলা ক্ষয় সাধনে সাহায্য করে।

(গ) মানুষের কার্যকলাপ দ্বারা যান্ত্রিক আবহবিকার

  • রাস্তা, রেললাইন, বাঁধ বা বাড়িঘর নির্মাণের জন্য পাথর কাটা, বিস্ফোরণ ঘটানো বা খনন কাজ করা হয়।

  • খনিজ উত্তোলন, কৃষিকাজ বা নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদনও শিলার ক্ষয় ঘটায়।

👉 এই সব কাজের মাধ্যমে মানুষ সরাসরি শিলাকে ভেঙে দেয়।


২. জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার

এক্ষেত্রে জীবজগৎ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার গঠন পরিবর্তন করে।

  • শিলার উপর মস্, লাইকেন, শৈবাল ইত্যাদি ক্ষুদ্র উদ্ভিদ জন্মায়।

  • এগুলো শিলার উপরিভাগে আর্দ্রতা ধরে রাখে। পচে গিয়ে হিউমাস তৈরি করে।

  • হিউমাস বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে হিউমিক অ্যাসিড বা জৈব অ্যাসিড তৈরি করে।

  • এই অ্যাসিড সহজেই ব্যাসল্ট, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ফেল্ডস্পার ইত্যাদি যৌগে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে শিলাকে দ্রুত ক্ষয় করে।

👉 তাই এই প্রক্রিয়ায় শিলা শুধু ভাঙে না, বরং রাসায়নিক গঠনও পরিবর্তিত হয়।


প্রমাণ: জৈব আবহবিকার একই সঙ্গে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক

উপরের আলোচনায় আমরা দেখলাম –

  • গাছের শিকড়, প্রাণী ও মানুষের কার্যকলাপ শিলাকে ভেঙে যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটায়।

  • অপরদিকে মস্, লাইকেন, শৈবাল ইত্যাদি ক্ষুদ্র উদ্ভিদ হিউমিক অ্যাসিড তৈরি করে রাসায়নিক আবহবিকার ঘটায়।

👉 তাই, জৈব আবহবিকার হলো একই সঙ্গে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার



West Bengal Class 9th Geography Suggestion 2025 WBBSE | Class 9 Geography Suggestion 2025 | পশ্চিমবঙ্গ নবম শ্রেণীর ভূগোল সাজেশন ২০২৫

নবম শ্রেণীর ভূগোল সাজেশন ২০২৫ – Class 9 Geography Suggestion 2025 :

  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – গ্রহরূপে পৃথিবী (প্রথম অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – পৃথিবীর গতিসমূহ (দ্বিতীয় অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – পৃথিবীপৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় (তৃতীয় অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ (চতুর্থ অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – আবহবিকার (পঞ্চম অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – দুর্যোগ ও বিপর্যয় (ষষ্ঠ অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – ভারতের সম্পদ (সপ্তম অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – পশ্চিমবঙ্গ (অষ্টম অধ্যায়) Click Here
  • নবম শ্রেণীর ভূগোল – মানচিত্র ও স্কেল (নবম অধ্যায়) Click Here


Post a Comment

We’d love to hear your thoughts! Share your comment below.

Previous Post Next Post