ভারতের সম্পদ | Class 9 Geography | WB Board | Chapter 7 | Question & Answer | MCQ, SAQ, VSAQ, Big Question
ভারতের সম্পদ
Class 9 Geography
WB Board Geography
Chapter 7 Question Answer
9th Class Geography MCQ
SAQ Questions
VSAQ Questions
বড় প্রশ্ন উত্তর
ভারতে কয়লা, তেল, খনিজ সম্পদ
Geography Class 9 WB Board
নবম শ্রেণীর (Class 9) ভূগোল সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ’ প্রশ্ন ও উত্তর – MCQ, SAQ, VSAQ ও বড় প্রশ্নসহ। ভারতের কয়লা, খনিজ তেল, তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, পারমাণবিক শক্তি ও অন্যান্য সম্পদ সম্পর্কিত সম্পূর্ণ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা। WB Board Class 9 Geography পড়াশোনা ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য।
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ (Bharoter Sompod) প্রশ্ন ও উত্তর | MCQ (প্রতি প্রশ্ন 1 নম্বর)
১) শিক্ষা কিসের অন্তর্ভুক্ত সম্পদ?
(A) মানবিক সম্পদ
(B) বস্তুগত সম্পদ
(C) জৈবিক সম্পদ
(D) অবস্তুগত সম্পদ
✔ উত্তর: (D) অবস্তুগত সম্পদ
২) নিচের কোনটি অপ্রচলিত শক্তির উৎস নয়?
(A) খনিজ তেল
(B) খরস্রোতা নদী
(C) সূর্যালোক
(D) কয়লা
✔ উত্তর: (C) সূর্যালোক
৩) ভারতের ভূ-তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে কোথায়?
(A) ভিজিনজাম
(B) মণিকরণ
(C) জালখেড়ি
(D) চিকমাগালুর
✔ উত্তর: (B) মণিকরণ
৪) ভারতের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কোথায় স্থাপিত হয়?
(A) কালপাক্কম
(B) তারাপুর
(C) ট্রম্বে
(D) শোলাপুর
✔ উত্তর: (B) তারাপুর
৫) রাজস্থানের কোন শহরে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র রয়েছে?
(A) রুদ্রসাগর
(B) কোটা
(C) তারাপুর
(D) ট্রম্বে
✔ উত্তর: (B) কোটা
৬) অরণ্য কোন ধরনের সম্পদ?
(A) মানবিক সম্পদ
(B) প্রাকৃতিক সম্পদ
(C) সাংস্কৃতিক সম্পদ
(D) অজৈব সম্পদ
✔ উত্তর: (B) প্রাকৃতিক সম্পদ
৭) সমুদ্র থেকে আহরিত মাছকে কোন শ্রেণির সম্পদ ধরা হয়?
(A) মানবিক সম্পদ
(B) সাংস্কৃতিক সম্পদ
(C) পূরণশীল সম্পদ
(D) স্থায়ী সম্পদ
✔ উত্তর: (C) পূরণশীল সম্পদ
৮) শিক্ষাকে কোন শ্রেণির সম্পদ ধরা হয়?
(A) সাংস্কৃতিক সম্পদ
(B) মানবিক সম্পদ
(C) মাটি
(D) জল
✔ উত্তর: (A) সাংস্কৃতিক সম্পদ
৯) তামিলনাড়ুর মুপ্পান্ডল পরিচিত একটি—
(A) সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
(B) ভূ-তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
(C) বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র
(D) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
✔ উত্তর: (C) বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র
১০) পরিবেশবান্ধব তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে কোন শ্রেণির কয়লা ব্যবহার হয়?
(A) লিগনাইট
(B) বিটুমিনাস
(C) অ্যানথ্রাসাইট
(D) পিট
✔ উত্তর: (C) অ্যানথ্রাসাইট
১১) শ্রমিক কোন ধরনের সম্পদের উদাহরণ?
(A) মানবিক সম্পদ
(B) প্রাকৃতিক সম্পদ
(C) সূর্যালোক
(D) মৃত্তিকা
✔ উত্তর: (A) মানবিক সম্পদ
১২) দক্ষতা কোন শ্রেণির সম্পদ?
(A) প্রাকৃতিক সম্পদ
(B) মানবিক সম্পদ
(C) ভূ-তাপ শক্তি
(D) গ্যাস
✔ উত্তর: (B) মানবিক সম্পদ
১৩) NTPC মূলত কোন শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত?
(A) জলবিদ্যুৎ
(B) পারমাণবিক শক্তি
(C) তাপবিদ্যুৎ
(D) সৌরবিদ্যুৎ
✔ উত্তর: (C) তাপবিদ্যুৎ
১৪) ক্রায়োলাইটকে কী ধরণের সম্পদ বলা হয়?
(A) সম্ভাব্য সম্পদ
(B) দুষ্প্রাপ্য সম্পদ
(C) চিরাচরিত সম্পদ
(D) কোনোটিই নয়
✔ উত্তর: (B) দুষ্প্রাপ্য সম্পদ
১৫) লোকটাক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
(A) সিকিম
(B) মণিপুর
(C) অরুণাচল প্রদেশ
(D) ওড়িশা
✔ উত্তর: (B) মণিপুর
১৬) “জ্ঞানই সকল সম্পদের মূল উৎস”— এই উক্তি কার?
(A) মিচেল
(B) মার্শাল
(C) অ্যাডাম স্মিথ
(D) জিমারম্যান
✔ উত্তর: (D) জিমারম্যান
১৭) 1992 সালে পৃথিবী সম্মেলন (Earth Summit) অনুষ্ঠিত হয়েছিল—
(A) মন্ট্রিল
(B) রিও ডি জেনিরো
(C) লন্ডন
(D) চেক প্রজাতন্ত্র
✔ উত্তর: (B) রিও ডি জেনিরো
১৮) বায়ুমণ্ডল কোন শ্রেণির সম্পদ?
(A) জাতীয় সম্পদ
(B) ব্যক্তিগত সম্পদ
(C) সামাজিক সম্পদ
(D) সর্বজনীন সম্পদ
✔ উত্তর: (D) সর্বজনীন সম্পদ
১৯) গবাদিপশুর সংখ্যায় ভারতের স্থান—
(A) প্রথম
(B) দ্বিতীয়
(C) তৃতীয়
(D) চতুর্থ
✔ উত্তর: (A) প্রথম
২০) পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনটি?
(A) ফারাক্কা
(B) মাইথন
(C) হিরাকুঁদ
(D) নেপ্লোর
✔ উত্তর: (A) ফারাক্কা
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ | Very Short Answer Questions (VSAQ) | Class 9 Geography (প্রতি প্রশ্ন 1 নম্বর)
১) কোন খনিজকে ‘কালো হীরা’ বলা হয়?
✔ উত্তর: কয়লা
২) উৎপাদন ক্ষমতা অনুসারে ভারতের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
✔ উত্তর: গুজরাটের মুন্দ্রা
৩) ভারতের প্রাচীনতম কয়লা খনির নাম কী?
✔ উত্তর: রানীগঞ্জ
৪) প্রচলিত শক্তি উৎসের মধ্যে কোনটি পরিবেশে দূষণ ঘটায় না?
✔ উত্তর: জলবিদ্যুৎ
৫) ভারতের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র কোনটি?
✔ উত্তর: তারাপুর
৬) পশ্চিমবঙ্গের কোন অঞ্চলে ভূ-তাপ শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে?
✔ উত্তর: বক্রেশ্বর
৭) সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের লৌহ আকরিক কোনটি?
✔ উত্তর: ম্যাগনেটাইট
৮) খনিজ তেলকে আর কী নামে ডাকা হয়?
✔ উত্তর: তরল সোনা
৯) ‘সাদা কয়লা’ বলতে কোন শক্তিকে বোঝানো হয়?
✔ উত্তর: জলবিদ্যুৎ
১০) ভারতের কয়লা প্রধানত কোন ভূতাত্ত্বিক যুগে গঠিত হয়েছিল?
✔ উত্তর: গন্ডোয়ানা যুগে
১১) পেট্রোলিয়ামের আরেকটি নাম কী?
✔ উত্তর: হাইড্রোকার্বন
১২) অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে কী ধরনের সম্পদ হিসেবে ধরা হয়?
✔ উত্তর: আন্তর্জাতিক সম্পদ
১৩) কয়লায় কার্বনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হলে তাকে কী বলা হয়?
✔ উত্তর: গ্রাফাইট
১৪) পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি উৎসকে কী নামে ডাকা হয়?
✔ উত্তর: সবুজ জ্বালানি
১৫) গুজরাটের কোন স্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে?
✔ উত্তর: লামডা
১৬) স্যাকারিন কোন খনিজ সম্পদের উপজাত দ্রব্য?
✔ উত্তর: কয়লা
১৭) সম্পদ সৃষ্টির তিনটি প্রধান উপাদান কী কী?
✔ উত্তর: প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতি
১৮) খনিজ তেলে প্রধানত কোন উপাদান বিদ্যমান থাকে?
✔ উত্তর: হাইড্রোকার্বন
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ | SAQ (Short Question and Answer) | Class 9 Geography
[প্রতি প্রশ্নের মান ২ নম্বর]
১) কোক কয়লা কি?
উত্তর:
কোক কয়লা বলতে বোঝায় এমন একটি বিশেষ ধরণের কয়লা, যা কোক চুল্লিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কয়লার মধ্যে থাকা অযৌগিক পদার্থ, মাটি, শিলাখণ্ড এবং অতিরিক্ত জল সম্পূর্ণভাবে আলাদা করা হয়। ফলস্বরূপ, উচ্চমানের শক্তিশালী কয়লা উৎপন্ন হয়, যা শিল্প ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। সহজভাবে বললে, কোক কয়লা হল প্রক্রিয়াজাত ও বিশুদ্ধ কয়লা, যা মূল কয়লার থেকে শক্তিশালী ও কার্যকর।
২) কয়লার শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর:
কোয়লার শ্রেণীবিভাগ সাধারণত কার্বনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে করা হয়। এই ভিত্তিতে কয়লাকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
-
অ্যানথ্রাসাইট (Anthracite): সবচেয়ে বেশি কার্বনযুক্ত, শক্তিশালী ও জ্বালানি হিসেবে কার্যকর।
-
বিটুমিনাস (Bituminous): মধ্যম মানের কয়লা, তাপ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার হয়।
-
লিগনাইট (Lignite): কম কার্বনযুক্ত, তুলনামূলকভাবে নরম ও আর্দ্র।
-
পিট (Peat): প্রাথমিক ধাপের কয়লা, মাটির মতো আর্দ্র অবস্থায় থাকে।
৩) সম্পদ কাকে বলে?
উত্তর:
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জিমারম্যান বলেছেন, “সম্পদ বলতে কোন বস্তু বা পদার্থকে বোঝায় না, বরং বোঝায় ঐ বস্তু বা পদার্থের কার্যকারিতা বা ব্যবহার, যা মানুষের চাহিদা পূরণ করে।”
অর্থাৎ, শুধুমাত্র বস্তু থাকা যথেষ্ট নয়; তা মানুষের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হলে সেটিই সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়।
৪) প্রচলিত সম্পদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর:
প্রচলিত সম্পদ বলতে বোঝায় এমন সম্পদ, যা প্রকৃতিতে সীমিত পরিমাণে বিদ্যমান এবং ক্রমাগত ব্যবহার করলে শেষ হয়ে যেতে পারে। এগুলিকে কখনও কখনও গচ্ছিত সম্পদ বা অপুনর্ভব সম্পদও বলা হয়।
উদাহরণ: কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি।
৫) অপ্রচলিত সম্পদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর:
অপ্রচলিত সম্পদ হলো এমন সম্পদ, যা সীমাহীন বা প্রচুর পরিমাণে প্রকৃতিতে বিদ্যমান এবং ব্যবহার করলেও তা কখনও শেষ হয় না। এগুলি পুনর্ভব সম্পদ হিসেবেও পরিচিত।
উদাহরণ: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, সমুদ্র শক্তি।
এগুলো পরিবেশ বান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
৬) আকরিক লোহার শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর:
আকরিক লোহাকে প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ
-
ম্যাগনেটাইট (Magnetite): লোহা এবং অক্সিজেনের সমৃদ্ধ আকরিক।
-
হেমাটাইট (Hematite): লোহা সমৃদ্ধ কিন্তু ম্যাগনেটিক নয়।
-
লিমোনাইট (Limonite): আর্দ্র পরিবেশে হেমাটাইটের রূপান্তরিত আকরিক।
-
সিডেরাইট (Siderite): লোহা এবং কার্বনেট সমৃদ্ধ আকরিক।
৭) কয়লার চারটি উপজাত দ্রব্যের নাম লেখো।
উত্তর:
কোয়লা থেকে বিভিন্ন শিল্প ও রাসায়নিক উপাদান উৎপন্ন করা যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপজাত দ্রব্য হলোঃ
-
ন্যাপথলিন (Naphthalene)
-
পিচ (Pitch)
-
কোলগ্যাস (Coal Gas)
-
আলকাতরা (Coal Tar)
-
স্যাকারিন (Saccharin)
৮) সাগর সম্রাট ও সাগর বিকাশ কী?
উত্তর:
সাগর সম্রাট ও সাগর বিকাশ হলো তৈলকূপ খননকারী ভাসমান প্ল্যাটফর্ম, যা সমুদ্রগর্ভ থেকে খনিজ তেল উত্তোলনে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: মুম্বইয়ের 173 কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরে অবস্থিত বম্বে হাই তৈলখনি, যেখানে প্রায় ২০০০ বর্গ কিমি অঞ্চলে সাগর সম্রাট ও সাগর বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯) কোনো একটি নিরপেক্ষ সামগ্রী সম্পদ হয়ে ওঠার শর্তগুলি কী কী?
উত্তর:
একটি নিরপেক্ষ সামগ্রী সম্পদ হিসেবে পরিণত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত থাকা আবশ্যকঃ
-
কার্যকারিতা: সামগ্রীটি ব্যবহারযোগ্য হতে হবে।
-
উপযোগিতা: মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হতে হবে।
-
মানব চাহিদা পূরণ: মানুষের অভাব মেটাতে বা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হতে হবে।
১০) জলবিদ্যুৎ শক্তিকে “সাদা কয়লা” বলা হয় কেন?
উত্তর:
কয়লার রঙ কালো, তাই তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
জল স্বচ্ছ বা বর্ণহীন হওয়ায়, জলবিদ্যুৎকে তুলনামূলকভাবে “সাদা কয়লা” বলা হয়।
অর্থাৎ, জল বিদ্যুৎ শক্তি হল কয়লার সমতুল্য শক্তি উৎস, যা পরিবেশ বান্ধব ও পুনর্নবীকরণযোগ্য।
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ | SAQ (Short Question and Answer) | Class 9 Geography
[প্রতি প্রশ্নের মান ৩ নম্বর]
১) ফ্যান্টম পাইল কি?
উত্তর:
ফ্যান্টম পাইল হলো একটি ধারণা যা বোঝায় যে, পৃথিবীতে পদার্থের সঞ্চয় নির্দিষ্ট হলেও তার কার্যকারিতা সর্বদা নির্দিষ্ট থাকে না। অর্থাৎ কোনো সম্পদ বাস্তবে উপস্থিত না থাকলেও তার কার্যকারিতা থাকতে পারে।
ধরা যাক, অতীতে ১ টন লোহা গলাতে ২ টন কয়লা লাগত। বর্তমানে, প্রযুক্তির উন্নতির কারণে একই পরিমাণ লোহা গলাতে ১ টন বা তার কম কয়লা লাগে। ফলে কয়লার কিছু অংশ ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়, কিন্তু ব্যবহারিক কার্যকারিতা এখনও বিদ্যমান থাকে। এই ধরনের অবস্থা ফ্যান্টম পাইল হিসেবে চিহ্নিত হয়।
সুতরাং, ফ্যান্টম পাইল হলো এমন একটি সম্পদ যা বাস্তবে উপস্থিত না হলেও তার কার্যকারিতা রয়েছে এবং এটি মানুষের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সক্ষম।
২) ‘জ্ঞান হল সম্পদের প্রকৃত জননী’ – মিচেল এর ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
মিচেল বলেছেন যে জ্ঞানই মূল উৎস, যা মানুষের শ্রম, দক্ষতা ও প্রযুক্তিকে কার্যকর করে এবং যে কোনো বস্তু বা সম্পদকে বাস্তব অর্থে সম্পদে পরিণত করে।
মানুষের চাহিদা, প্রয়োজন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তর এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পদের ব্যবহার ও উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, কাঁচামাল, জ্ঞান ও দক্ষতা একত্রিত হলে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
মানুষের বুদ্ধি, গবেষণা ও উদ্ভাবন যেকোনো বস্তুকে সম্পদের পর্যায়ে নিয়ে আসে। সুতরাং, মিচেল এই কারণে বলেন যে জ্ঞানই সকল সম্পদের প্রকৃত জননী, কারণ এটি সম্পদের স্থায়িত্ব, কার্যকারিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার নিশ্চিত করে।
৩) তাপবিদ্যুৎ শক্তির দুটি সুবিধা ও দুটি অসুবিধা লেখ।
উত্তর:
সুবিধা:
১. কম প্রাথমিক ব্যয়: তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রাথমিক খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
২. অবস্থানজনিত সুবিধা: কয়লা বা খনিজ তেল উত্তোলন এলাকার যেকোনো দূরত্বে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব।
অসুবিধা:
১. উচ্চ দৈনিক ব্যয়: প্রাথমিক খরচ কম হলেও দৈনন্দিন পরিচালনা ব্যয় অনেক বেশি।
২. পরিবেশ দূষণ: কয়লা বা তেলের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, ফলে বায়ু, জল ও মৃত্তিকা দূষিত হয়।
৪) ‘তাপবিদ্যুতের তুলনায় জলবিদ্যুৎ পরিবেশমিত্র’ – কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো কয়লা, যা পুড়ে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া, ধূলিকণা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে। এছাড়া কয়লার ছাই মিশ্রিত জলও পরিবেশকে দূষিত করে।
অপরদিকে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে নদীর জলের প্রবল গতিকে টারবাইন বা মোটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পরিবেশে প্রায় কোনো দূষণ ঘটে না। নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তা তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতি করে। সুতরাং, জলবিদ্যুৎ শক্তি তাপবিদ্যুতের তুলনায় পরিবেশবান্ধব ও স্থায়ী।
৫) ভারতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা কম কেন?
উত্তর:
ভারতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কম হওয়ার কারণগুলো হলোঃ
১. কাঁচামালের অভাব: ভারতে ইউরেনিয়াম অপ্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তাই পারমাণবিক বিদ্যুতের কাঁচামাল সীমিত।
২. বিকল্প শক্তির প্রাধান্য: ভারতে বিদ্যুতের প্রায় ৮০% চাহিদা জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুতের মাধ্যমে পূরণ হয়।
৩. উন্নত প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা: পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং নিরাপদভাবে পরিচালনার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন।
এই কারণে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন তুলনামূলকভাবে সীমিত।
৬) জলবিদ্যুৎ শক্তির দুটি সুবিধা ও দুটি অসুবিধা লেখ।
উত্তর:
সুবিধা:
১. পৃথিবীতে জলের ভাণ্ডার অফুরন্ত, তাই যে কোনো খরস্রোতা নদীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
২. উৎপাদন ব্যয় কম এবং এটি পরিবেশবান্ধব শক্তি।
অসুবিধা:
১. বিদ্যুৎ সঞ্চয় করা যায় না।
২. নদীতে বাঁধ বা জলাধার নির্মাণের জন্য বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস হয় এবং জীববৈচিত্র বিনষ্ট হয়।
৭) পারমাণবিক শক্তির দুটি সুবিধা ও দুটি অসুবিধা লেখ।
উত্তর:
সুবিধা:
১. অল্প কাঁচামাল ব্যবহার: সামান্য পরিমাণ কাঁচামাল দিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
২. স্থাপন নমনীয়তা: কম কাঁচামালের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে কেন্দ্র স্থাপন করা যায়।
অসুবিধা:
১. তেজস্ক্রিয় নির্গমন: পারমাণবিক বিদ্যুৎ নির্গত তেজস্ক্রিয় শক্তি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
২. পরিবেশ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি: পারমাণবিক শক্তি থেকে বোমা তৈরি ও পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
৮) সৌর শক্তির ব্যবহার লেখ।
উত্তর:
সৌর শক্তি হলো সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি। পৃথিবীতে প্রায় সব শক্তি, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি—কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস—প্রাচীন সৌরশক্তির সংরক্ষণ।
সৌর শক্তির ব্যবহার:
১. লেন্স ব্যবহার: সূর্যের আলোকে অভিসারী করে আগুন জ্বালানো।
২. সৌরচুল্লী: ধাতব পাতের মাধ্যমে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে রান্না করা।
৩. সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন: সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি।
৪. গরম জল ও হিটার: জল গরম করা বা শীতপ্রধান দেশে বাড়ি গরম রাখা।
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ | রচনাধর্মী / বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন (বড় প্রশ্ন) | Class 9 Geography
[প্রতি প্রশ্নের মান ৫ নম্বর]
১) ভারতে কয়লা উত্তোলনের সমস্যাগুলি কি কি?
উত্তর:ভারতে কয়লা উত্তোলন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম হলেও, দেশব্যাপী কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা বিদ্যমান। নিম্নে সেগুলি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
১. কয়লার মান ও প্রকার:
ভারতের কয়লার মান সবসময় উচ্চ নয়। দেশের মধ্যে গন্ডয়ানা যুগের মধ্যম মানের বিটুমিনাস কয়লা এবং টারশিয়ারি যুগের নিম্নমানের লিগনাইট কয়লা প্রধানত বিদ্যমান। ফলে ধাতু উৎপাদন বা বিশেষ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চমানের কয়লা সহজলভ্য নয়।
২. পরিবহন সমস্যাঃ
উত্তোলিত কয়লা শিল্প বা বাজারে পৌঁছে দিতে যথাযথ পরিবহন ব্যবস্থা প্রায়ই অনুপস্থিত। খনি থেকে রেলপথে প্রয়োজনীয় রেল ওয়াগন সবসময় পাওয়া যায় না। ফলে কয়লা সরবরাহে বিলম্ব এবং ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৩. কোকিং কয়লা ও উপজাত দ্রব্যের অভাবঃ
ভারতে কয়লা থেকে কোকিং কয়লা বা অন্যান্য উপজাত দ্রব্য তৈরি করার সুব্যবস্থা পর্যাপ্ত নেই। ফলে সাধারণ কয়লাকে কোক কয়লা বা শিল্পজাত সামগ্রীতে রূপান্তর করা কষ্টসাধ্য হয়।
৪. আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির অভাবঃ
খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি প্রয়োজন। ভারতের বেশিরভাগ খনিতে এই আধুনিক সরঞ্জাম নেই, যার ফলে সম্পূর্ণভাবে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হয় না।
৫. ধাতু উৎপাদনের জন্য অপ্রয়োজনীয় কয়লা:
ভারতের অনেক কয়লা অ-কোকিং, যা ধাতু নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহারযোগ্য নয়। এছাড়া কয়লার ছাই-এর পরিমাণ অনেক বেশি, প্রায় ২০-৩৫%, যা উৎপাদন কার্যকারিতা হ্রাস করে।
৬. অসম বণ্টন:
কয়লার সঞ্চয় ভারতে অসমভাবে বণ্টিত। দেশীয় শিল্পকেন্দ্র ও শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা সবখানে নেই। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বেশি কয়লা রয়েছে, যেখানে পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের প্রায় কোনো কয়লা নেই। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পোন্নয়নে বৈষম্য দেখা দেয়।
৭. পরিবেশগত সমস্যা ও বিকল্প শক্তির প্রাধান্য:
কয়লা দহন থেকে বায়ু ও জলদূষণ ঘটে। এই কারণে ভারত সরকার কয়লার পরিবর্তে অপ্রচলিত শক্তি, যেমন সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ, ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে। ফলস্বরূপ, কয়লার চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে, যা সরাসরি উত্তোলন হ্রাসের কারণ।
উপসংহার:
ভারতে কয়লা উত্তোলনের সমস্যাগুলি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত নয়; এগুলো পরিবহন, মান, পরিবেশ এবং বণ্টন সংক্রান্ত জটিলতার সমন্বয়। দেশীয় শক্তি নীতিতে অপ্রচলিত শক্তির গুরুত্ব বৃদ্ধির ফলে কয়লা উত্তোলনের কার্যকারিতা এবং চাহিদা উভয়েই প্রভাবিত হচ্ছে।
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ | রচনাধর্মী / বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন (বড় প্রশ্ন) | Class 9 Geography
[প্রতি প্রশ্নের মান ৫ নম্বর]
প্রশ্ন: 2 সম্পদ সৃষ্টিতে প্রাকৃতিক ও মানবিক বাধাগুলি উল্লেখ করে, সম্পদ সৃষ্টিতে প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:
1. সম্পদ সৃষ্টিতে প্রাকৃতিক বাধা
প্রকৃতি নিজেই সম্পদের উৎস এবং আধার। আলো, বাতাস, জল, মাটি, বনভূমি, খনিজ ও জীবজগত—এগুলো হল সম্পদের সম্ভাব্য উৎস। তবে এই উপকরণগুলো সবসময় সম্পদে রূপান্তরিত হয় না। অনেক সময় প্রাকৃতিক বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সম্পদ সৃষ্টির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ:
-
মরুভূমি ও অনুর্বর মৃত্তিকা: অরুক্ষ, শুকনো মাটিতে ফসল উৎপাদন বা কৃষি সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত।
-
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, সাইক্লোন ইত্যাদি ঘটনার কারণে সম্পদের উৎপাদন ও ব্যবহার ব্যাহত হয়।
-
অপ্রচলিত পরিবেশ: কখনো কখনো অতিরিক্ত তাপমাত্রা, কম বা অপ্রতুল জল, বায়ুর দূষণ সম্পদ সৃষ্টি ও ব্যবহারে সমস্যা তৈরি করে।
সুতরাং, প্রাকৃতিক উপকরণ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই কিছু সময় সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
২. সম্পদ সৃষ্টিতে মানবিক বাধা
মানুষ নিজেও সম্পদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের মানবিক প্রতিবন্ধকতা প্রধানত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে উদ্ভূত। উদাহরণস্বরূপ:
-
অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা: মানুষ যদি কোনো প্রযুক্তি বা জ্ঞান না জানে, তবে প্রাকৃতিক উপাদানকে সম্পদে রূপান্তর করা কঠিন হয়।
-
কুসংস্কার ও প্রচলিত ভুল ধারণা: উন্নত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে।
-
অপযুক্ত নীতি ও বুদ্ধিহীনতা: মানবসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে সম্পদ সৃষ্টিতে ধীরগতি হয়।
এই কারণে মানবিক কারণে সম্পদ উৎপাদন ও ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।
৩. সম্পদ সৃষ্টিতে প্রকৃতির ভূমিকা
প্রকৃতি হল সম্পদ সৃষ্টি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ও অপরিহার্য উপাদান। মানুষের হস্তক্ষেপ ব্যতীত পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রতিটি বস্তু প্রকৃতির অন্তর্গত।
-
প্রকৃতি বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে, যেমন: জল, বায়ু, খনিজ, মৃত্তিকা, বন, নদী ও সমুদ্র।
-
প্রকৃতির এই উপকরণই সম্পদের মূল উৎস, যা মানুষ, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির সাহায্যে কার্যকরী সম্পদে রূপান্তরিত হয়।
-
প্রকৃতিতে পাওয়া সম্পদ দুই ধরনের হয়:
১. পুনর্ভব সম্পদ (Renewable Resources) – যেমন: জল, বায়ু, বন।
২. অপুনর্ভব সম্পদ (Non-renewable Resources) – যেমন: কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস।
সুতরাং প্রকৃতি হল সম্পদের ধারক ও বাহক, যা মানুষের কার্যক্রম ও সংস্কৃতির সাহায্যে বাস্তব অর্থে সম্পদে পরিণত হয়।
৪. সম্পদ সৃষ্টিতে মানুষের ভূমিকা
মানুষ সম্পদ সৃষ্টির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানুষ তার শ্রম, দক্ষতা, জ্ঞান, উদ্ভাবন ও চিন্তাভাবনা ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপাদানগুলোকে সম্পদে রূপান্তরিত করে।
-
মানুষ সম্পদের স্রষ্টা এবং ভোগকারী উভয় ভূমিকা পালন করে।
-
উদাহরণ: প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও গবেষণার মাধ্যমে সাধারণ খনিজকে শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করা।
-
মানবসম্পদ ও বুদ্ধি সম্পদ সৃষ্টির গতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়।
৫. সম্পদ সৃষ্টিতে সংস্কৃতির ভূমিকা
সংস্কৃতি সম্পদ সৃষ্টির তৃতীয় গতিশীল উপাদান। অধ্যাপক হ্যামিলটনের মতে, বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা সম্পদ সৃষ্টিতে সহায়ক।
-
সংস্কৃতি মানুষের কাজের পদ্ধতি, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
-
উদাহরণ: কৃষি সংস্কৃতি, কারিগরি শিক্ষার প্রচলন, পরিবেশ সচেতনতা।
-
সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষ প্রাকৃতিক উপাদানকে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর ও স্থায়ী সম্পদে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার:
সম্পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতি পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং সমন্বিতভাবে কাজ করে। প্রকৃতি উপকরণ দেয়, মানুষ তা কাজে লাগায় এবং সংস্কৃতি এর ব্যবহার ও দীর্ঘস্থায়ীতা নিশ্চিত করে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক অজ্ঞতা বা কুসংস্কার কখনো কখনো সম্পদ সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই তিনটি উপাদানের সঠিক সমন্বয় সম্পদ সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য।
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ | রচনাধর্মী / বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন (বড় প্রশ্ন) | Class 9 Geography
প্রশ্ন: 3 কয়লার ব্যবহার গুলি লেখো। ভারতে কয়লার আঞ্চলিক বন্টন উল্লেখ করো।
১) কয়লার ব্যবহার
ভারতে কয়লা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মূলত এর ব্যবহারকে চারটি প্রধান দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়:
১. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি:
ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা প্রধান জ্বালানি উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার একটি বড় অংশ এই কয়লার মাধ্যমে পূরণ করা হয়।
২. লৌহ ও ইস্পাত শিল্প:
কয়লার একটি অংশ (প্রায় ৫%) লৌহ ও ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এখানে কয়লা আকরিক লোহা গলানোর জন্য কোকিং কয়লা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. গৃহস্থলীর জ্বালানি:
গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলে গৃহস্থলীর রান্না বা হিটার হিসাবে কয়লা ব্যবহার করা হয়। বিশেষত, যেখানে LPG বা বিদ্যুতের সহজলভ্যতা কম, সেখানে কয়লা এখনও প্রধান জ্বালানি।
৪. কয়লার উপজাত দ্রব্য:
কয়লা থেকে প্রাপ্ত পিচ ও আলকাতরা রাস্তা নির্মাণ, ছাদের লেপ, বাড়ি-ঘর ও অন্যান্য নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলো মূলত শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।
২) ভারতে কয়লার আঞ্চলিক বন্টন
ভারতের কয়লা উত্তোলন অঞ্চলগুলোকে প্রধানত দুটি যুগভিত্তিক ভাগে ভাগ করা যায়:
(ক) গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা
-
সৃষ্টি সময়: প্রায় ২৮–৩০ কোটি বছর আগে।
-
প্রধান বৈশিষ্ট্য: ভারতের মোট কয়লার ৯৯% এই যুগের কয়লা, যা বেশিরভাগ বিটুমিনাস জাতীয়।
-
প্রধান অঞ্চলসমূহ:
-
দামোদর উপত্যকা: ঝরিয়া, বোকারো, করনপুরা, গিরিডি
-
পশ্চিমবঙ্গ: রানীগঞ্জ, আসানসোল
-
শোন উপত্যকা: ঝিলিমিলি, বিশ্রামপুর, উমারিয়া
-
মহানদী উপত্যকা: তালছের, সম্বল্পুর
-
গোদাবরী উপত্যকা: সিঙ্গারেনি, অঙ্গারগাও
-
গন্ডোয়ানা যুগের কয়লার মান তুলনামূলকভাবে ভালো এবং এটি তাপবিদ্যুৎ ও ইস্পাত শিল্পে প্রধানত ব্যবহৃত হয়।
(খ) টারশিয়ারী যুগের কয়লা
-
সৃষ্টি সময়: প্রায় ৬–৭ কোটি বছর আগে, মূলত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে।
-
প্রধান বৈশিষ্ট্য: নিম্নমানের কয়লা, যা মূলত লিগনাইট জাতীয়।
-
প্রধান অঞ্চলসমূহ:
-
অসম: মাকুম, জয়পুর
-
অরুণাচল প্রদেশ: নামফুক, নামচিক
-
মেঘালয়: চেরাপুঞ্জি, মাওলিং
-
পশ্চিমবঙ্গ: দার্জিলিংয়ের কাছে বাগরাকোট, তিনঝরিয়া
-
টারশিয়ারী যুগের কয়লা তুলনামূলকভাবে কম মানের এবং সাধারণত স্থানীয় ব্যবহার বা সীমিত শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার:
ভারতের কয়লা দেশের অর্থনৈতিক ও শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাপবিদ্যুৎ, লৌহ-ইস্পাত, গৃহস্থলী জ্বালানি এবং উপজাত দ্রব্যের মাধ্যমে কয়লা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে এর ভৌগোলিক বন্টন অসম, যা শিল্পোন্নয়ন ও শক্তি ব্যবস্থাপনায় প্রভাব ফেলে।
📘 নবম শ্রেণী ভূগোল – সপ্তম অধ্যায়
ভারতের সম্পদ | রচনাধর্মী / বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন (বড় প্রশ্ন) | Class 9 Geography
[প্রতি প্রশ্নের মান ৫ নম্বর]
প্রশ্ন: 4. খনিজ তেলের গুরুত্বগুলি লেখো। ভারতের খনিজ তেল উত্তোলন অঞ্চলগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
১) খনিজ তেলের গুরুত্ব
ভারতে খনিজ তেল অর্থনৈতিক এবং শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এর ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়। প্রধান ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো হলো:
১. পরিবহন ও যানবাহনে ব্যবহার:
খনিজ তেল বিমানের ইঞ্জিন, মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, রেল ইঞ্জিন এবং জাহাজ চালানোর জন্য অপরিহার্য। এর মাধ্যমে যানবাহন ও পরিবহন ব্যবস্থা সচল থাকে।
২. মেশিন ও শিল্পকারখানায় জ্বালানি:
মেশিন চালানোর জন্য পেট্রোল (গ্যাসোলিন) এবং ডিজেল প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কৃষি মেশিন ও পাম্পিং স্টেশনও খনিজ তেলের উপর নির্ভরশীল।
৩. তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার:
ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা ছাড়াও খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য যেমন: ফার্নেস অয়েল, হাই স্পিড ডিজেল ওয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার:
আধুনিক যুদ্ধ ট্যাংক, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান প্রভৃতি চালানোর জন্য খনিজ তেল অপরিহার্য। এটি দেশের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
উপসংহার:
অতএব, খনিজ তেল শুধুমাত্র শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, বরং পরিবহন, প্রতিরক্ষা এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অগ্রগতির জন্যও অপরিহার্য সম্পদ।
২) ভারতের খনিজ তেল উত্তোলন অঞ্চল
ভারতে খনিজ তেল উৎপাদন প্রধানত চারটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা যায়:
(ক) পূর্ব ভারতের খনিজ তেল উৎপাদন কেন্দ্র
-
অঞ্চল: অসম রাজ্যের ডিগবয়, নাহারকাটিয়া, মুরান, টিয়ক এবং অরুণাচল প্রদেশের খারসাং ও নিঙ্গারু।
-
বৈশিষ্ট্য: পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে প্রাচীন খনিজ তেলের উত্পাদন কেন্দ্র বিদ্যমান। অসমের তেল ক্ষেত্র ভারতীয় তেল শিল্পের অন্যতম প্রাথমিক কেন্দ্র।
(খ) পশ্চিম ভারতের খনিজ তেল উৎপাদন কেন্দ্র
-
অঞ্চল: গুজরাট রাজ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
-
ভারুচ জেলার আঙ্গুলেশ্বের, দহেজ, কোসাম্বা
-
সুরাট জেলার ওলপদ
-
মহেসানা জেলার ডিলার, কালোল, কাড়ি
-
আমেদাবাদ জেলার ধোলকা ও সানন্দ
-
-
বৈশিষ্ট্য: পশ্চিম ভারতের এই কেন্দ্রগুলি দেশীয় তেল চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ।
(গ) আরব সাগরের সমুদ্রসীমা অঞ্চলের খনিজ তেল
-
অঞ্চল: মুম্বাইয়ের 173 কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরের মহীসোপান।
-
বিস্তারিত: বোম্বে হাই তেল ক্ষেত্র প্রায় 2,000 বর্গকিমি অঞ্চলে বিস্তৃত।
-
গুরুত্ব: এটি ভারতের প্রধান সমুদ্রসীমার তেলক্ষেত্র, যা দেশের প্রায় ৫০% খনিজ তেল উৎপাদন নিশ্চিত করে এবং প্রাথমিক অবস্থানে রয়েছে।
(ঘ) দক্ষিণ ভারতের খনিজ তেল উৎপাদন কেন্দ্র
-
অঞ্চল: অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্যে অবস্থিত।
-
অন্ধ্রপ্রদেশ: কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলের রাজোল, লিঙ্গালা
-
তামিলনাড়ু: ভুবনগিরি, আরিয়াক্কামঙ্গলম
-
-
বৈশিষ্ট্য: দক্ষিণ ভারতের এই তেল ক্ষেত্রগুলি দেশের তেল সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক।
উপসংহার:
ভারতের খনিজ তেল অর্থনৈতিক ও শিল্পোন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও আরব সাগর অঞ্চলের খনিজ তেল উৎপাদন কেন্দ্রগুলির মধ্যে প্রতিটি অঞ্চল নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ও শিল্পগত গুরুত্ব বহন করে। এই কেন্দ্রগুলোর সাহায্যে দেশীয় তেলের চাহিদা পূরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প কার্যক্রম এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
West Bengal Class 9th Geography Suggestion 2025 WBBSE | Class 9 Geography Suggestion 2025 | পশ্চিমবঙ্গ নবম শ্রেণীর ভূগোল সাজেশন ২০২৫
নবম শ্রেণীর ভূগোল সাজেশন ২০২৫ – Class 9 Geography Suggestion 2025 :
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – গ্রহরূপে পৃথিবী (প্রথম অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – পৃথিবীর গতিসমূহ (দ্বিতীয় অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – পৃথিবীপৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় (তৃতীয় অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ (চতুর্থ অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – আবহবিকার (পঞ্চম অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – দুর্যোগ ও বিপর্যয় (ষষ্ঠ অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – ভারতের সম্পদ (সপ্তম অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – পশ্চিমবঙ্গ (অষ্টম অধ্যায়) Click Here
- নবম শ্রেণীর ভূগোল – মানচিত্র ও স্কেল (নবম অধ্যায়) Click Here